ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাঘৈর এলাকার ৫ম শ্রেণী ছাত্র অপহরণের ২৪ দিন পর ভিক্টিম ছাত্রকে ইকুরিয়া এলাকার একটি ভবন থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব ১০।
উক্ত ঘটনায় ভিক্টিমের মায়ের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার রহমান (১৯) কে মুক্তিপণের টাকাসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১৩ অক্টোবর (রবিবার) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান র্যাব ১০ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়ার্ডন লিডার তারিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন বাঘৈর এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুবেল (৩৪), পিতা-শামির উল্লাহ এর ছেলে বাঘৈর প্রাইমারী স্কুলে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ তুষার (১০) গত ০৫ সেপ্টেম্বর তার মায়ের সাথে তার নানা বাড়ী একই থানাধীন কদমপুরে বেড়াতে যায়। তার কয়েকদিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠে খেলতে যায়। তুষার বাড়ীতে না ফিরলে তুষারের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তুষারের নানি নাসিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কিডনাপার নামক একটি ইমো আইডি থেকে ফোন করে তুষারকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং প্রথমে তুষারের খাওয়া-দাওয়ার খরচ বাবদ ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা দাবি করলে তুষারের নানি নাসিমা বেগম অপহরণকারীর দেয়া বিকাশ নম্বরে ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা প্রেরণ করেন।
টাকা পাওয়ার পরপরই উক্ত কিডনাপার নামক ইমো আইডিটি বন্ধ করে ফেলে। পরবর্তীতে গত ০২ অক্টোবর অজ্ঞাত অপহরণকারী পুনরায় কিডনাপার নামক ইমো আইডি থেকে তুষারের দাদার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে তুষারের মুক্তিপণ হিসেবে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দাবি করে অন্যথায় তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারের বাবা তার আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অপহরণকারীর প্রদেয় বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা প্রদান করেন। অপহরণকারীর দাবিকৃত ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দেয়ার পর ভিকটিম তুষারকে ফেরত চাইলে অপহরণকারী ভিকটিম তুষারকে ফেরত না দিয়ে আরও ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ভিকটিম তুষারের বাবা আর টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে পরামর্শ করে গত ০৭ অক্টোবর ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
অপহরণকারী ভিকটিমের বাবার সাথে যোগযোগ করে এবং আরো টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ভিকটিমের বাবা ভিকটিম তুষারকে দেখতে চাইলে অপহরণকারী ভিকটিমের বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের বাবাকে পাঠায় এবং ভিকটিমকে জীবিত পেতে হলে দ্রত আরো ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিতে বলে। ভিকটিমের বাবা তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের নিকট হতে ধার-দেনা করে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অপহরণকারীদের দেয়া বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে আরো ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রেরণ করেন। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী ইমো আইডিটি বন্ধ করে ফেলে।
পরবর্তীতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তুষারের অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারকে দ্রত উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এর ধারাবাহিকতায় ১৩ অক্টোবর ভোর আনুমানিক ০৪ টায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার পল্টন থানাধীন কাপ্তান বাজার এলাকা হতে অপহরণকারী শাহরিয়ার রহমান (১৯), পিতা-মোঃ আরিফুর রহমান, সাং-ইকুরিয়া, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা’কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার আসামী শাহরিয়ারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয় স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন ইকুরিয়া এলাকায় শাহরিয়ারের ভাড়া করা একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বাড়ীর ৩য় তলার একটি কক্ষ হতে অক্ষত অবস্থায় ভিকটিম তুষারকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় উক্ত বাসা হতে মুক্তিপণের নগদ-৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় , আসামী শাহরিয়ার তুষারের মামা (মায়ের খালাতো ভাই)। ঘটনার দিন গত ১৯ সেপ্টেম্বর তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে খেলতে যায়। সেখানে খেলাধুলা শেষে শাহরিয়ার তুষারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি অটো-রিক্সাতে করে হাসনাবাদে শাহরিয়ারের ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সেখানে আটকে রাখে। ভিকটিম তুষার বাড়ীতে বা তার মায়ের কাছে যাওয়ার কথা বললে শাহরিয়ার ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও বিভিন্ন প্রকার শিশুখাদ্য কিনে দিতে এবং শীঘ্রই তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিত বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।