বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ঢাকার কেরানীগঞ্জে সৃষ্টি হয়েছিল এক প্রাণবন্ত, বর্ণিল ও আনন্দঘন পরিবেশ।
বাংলা ১৪৩২ সালকে বরণ করে নিতে ১৪ এপ্রিল (সোমবার) সকালে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। উৎসবটি যেন রূপ নেয়েছিল এক অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলায়, যেখানে অংশ নেয় সব ধর্ম, বর্ণ ও পেশার মানুষ।
দিনের শুরুতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়ার নেতৃত্বে তার কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি উপজেলা চত্বর ঘুরে পুনরায় প্রশাসনিক ভবনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অংশ নেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ও নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।
র্যালিকে প্রাণবন্ত করে তোলে বৈশাখী সাজে সজ্জিত বরযাত্রী দল, ঐতিহ্যবাহী একতারা, দোতারা, বাঁশি ও অন্যান্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাজির শিক্ষার্থীরা। রাস্তাজুড়ে মুখর ছিল ঢাক-ঢোল, মুখোশ, ফেস্টুন আর বৈশাখী গানের সুর। পুরো এলাকা পরিণত হয় এক উৎসবস্থলে, যেখানে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি একাকার হয়ে যায়।
র্যালি শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় উঠে আসে বাংলা সংস্কৃতির চিরায়ত রূপ—নৃত্য, গান, কবিতা, আবৃত্তি এবং লোকজ সংগীত ছিল দর্শকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল ঐতিহ্যবাহী পান্তা ভাত ভোজনের আয়োজন। যদিও ইলিশ মাছ ধরা বর্তমানে নিষেধ, তাই বিকল্প হিসেবে পরিবেশন করা হয় টাটকিনা মাছ ভাজা, নানারকম ভর্তা, দেশীয় ফল, মোয়া, মুরকি ও বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন।
দিনব্যাপী বিটি মাঠে বসে বৈশাখী মেলা। মেলায় ছিল গ্রামীণ হস্তশিল্প, মাটির তৈজসপত্র, বাঁশ-কাঁসার সামগ্রী, খেলনা, পুতুলনাচ, গ্রামীণ খাবার ও নানা বিনোদনের আয়োজন। এ মেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজাদ্দেদ আলী বাবু।
হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মেলা পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত উৎসবে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কেরানীগঞ্জে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন কেবল আনন্দ আর বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি হয়ে উঠেছিল বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বৈশাখী এই উৎসব সকলকে একত্র করেছে, ছড়িয়ে দিয়েছে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মিলনের বার্তা।
এভাবেই বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব নতুন বছরের সূচনায় এনে দিল নবচেতনার আনন্দধারা।